বহু বছর পর এ কাকে দেখছেন। অনেকটা ভূত দেখার মতো চমকে ওঠেন মিথুন
(ছদ্মনাম)। মনের মধ্যে অস্বস্তি, বউ না আবার টের পেয়ে যায়! পারিবারিক
একটি বিয়েতে মিথুনের সঙ্গে দেখা হয় তাঁর একসময়ের প্রেমিকার। মিথুন বুঝতে
পারেন না, আগ বাড়িয়ে কথা বলা ঠিক হবে কি না। পরিস্থিতিকে সহজ করতে সেই
মেয়েটি নিজে এসে কথা বলেন মিথুন ও তাঁর বউ অরণির সঙ্গে। বিশ্ববিদ্যালয়ের
সহপাঠী হিসেবেই নিজেকে পরিচয় দেন তিনি। এতে খানিকটা হাঁফ ছেড়ে বাঁচেন
মিথুন।
তবে ঘটনার এখানেই শেষ নয়। বেশ কয়েক দিন পর অরণি আবিষ্কার করেন,
বিয়েবাড়ির সেই মেয়েটি শুধু সহপাঠী নয়, মিথুনের একসময়ের প্রেমিকাও।
পুরো বিষয়টিতে বেশ কষ্ট পান অরণি। মনে মনে ভাবেন, মিথ্যা বলার দরকার কী
ছিল, মিথুন তো খোলাখুলি সত্যটাই বলতে পারত। কিন্তু মিথুন ভেবেছেন উল্টো।
সত্যিটা জানলে অরণি নিশ্চয় কষ্ট পাবে।
দাম্পত্য জীবনে কখনো কখনো এই টানাপোড়েন তৈরি হয়। অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির
মুখোমুখি হতে হয়। কিন্তু নিজেকে লুকিয়ে এই পরিস্থিতি মোকাবিলা করা যাবে
না। জীবনের নানা বাঁকে বন্ধুত্ব, প্রেম হতেই পারে। এটিই স্বাভাবিক। সব
প্রেম থেকেই যে বিয়ে হবে এমন নয়। কালের পরিক্রমায় একসময়ের প্রিয়
মানুষটির সঙ্গে দেখা হতেই পারে। তখন কী করবেন আপনি।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, পুরোনো প্রেমিক বা প্রেমিকার সঙ্গে দেখা হলে স্বামী
বা স্ত্রীকে স্বাভাবিক থাকতে হবে। পরিস্থিতি সহজ করতে এর কোনো বিকল্প নেই।
একসময়ের ভালোবাসার মানুষটির সঙ্গে দেখা হলে মনে আলোড়ন হতেই পারে। এই
অনুভূতি অস্বীকার না করলেও তা নিয়ে উচ্ছ্বসিত হওয়া উচিত হবে না। এ
ক্ষেত্রে সঙ্গীকেও অনেক উদারতার পরিচয় দিতে হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞানের অধ্যাপক মাহবুবা নাসরীন বলেন, সঙ্গীর
সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক হলে শুরুতেই সত্যি বলতে পারেন। তবে সঙ্গী যদি
সন্দেহবাতিক হন বা উদার মানসিকতার না হন, তাহলে কোনো রোমান্টিক মুহূর্তে
তাঁকে সবকিছু খুলে বলুন। কথা লুকিয়ে গেলেই সন্দেহ তৈরি হয়। সঙ্গীকে সেই
সুযোগ দেবেন না। আবার সঙ্গীকেও বুঝতে হবে আপনার মনের অবস্থা। এটি নিয়ে
দুশ্চিন্তার কিছু নেই।
যদি পুরোনো প্রেমিক বা প্রেমিকার সঙ্গে কোনো কারণে দেখা হয়ে যায়, তাহলে উভয় পক্ষই কী করতে পারে, সে বিষয়ে পরামর্শ দেওয়া হলো:
স্বামী-স্ত্রীর পরস্পরের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ ও বিশ্বস্ততার সম্পর্ক
থাকলে সরাসরি কথা বলতে হবে। হয়তো পারিবারিক বা আনুষ্ঠানিক উপলক্ষে কোথাও
দেখা হয়ে গেল, তাহলে ঠিক সেই মুহূর্তে না বলে বাসায় ফিরে শান্তভাবে বলতে
পারেন।
হয়তো সঙ্গীর অবর্তমানে দেখা হলো। তবু বাসায় ফিরে বলা যেতে পারে। এতে সম্পর্কে স্বচ্ছতা থাকবে।
সঙ্গীর পুরোনো প্রেমিক বা প্রেমিকার কথা জানার পর বা পরিচয়ের পর এটি
নিয়ে বেশি না ভাবাই ভালো। এতে দাম্পত্যে দূরত্ব তৈরি হয়। বুঝতে হবে,
একসময় হয়তো সঙ্গীর জীবনে তিনি ছিলেন। এখন তিনি অতীত। আপনিই বর্তমান। সব
ভালোবাসা-শ্রদ্ধা আপনার জন্য। ফলে নেতিবাচক ভাবনা মনে স্থান না দেওয়াই
ভালো।
খেয়াল রাখতে হবে, পুরোনো সম্পর্ক যেন আবার নতুন রূপ না পায়। সঙ্গীর বিশ্বাস না ভাঙে।
No comments:
Post a Comment